রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায় আর নেই এবার ৩২ টাকা কেজিতে ৫ লাখ টন ধান,   ১২ লাখ টন চাউল কিনবে সরকার  জগন্নাথপুরে লন্ডন প্রবাসীর বাড়ী বেদখল চেষ্টায় সংবাদ সম্মেলন জগন্নাথপুরে হাওরে ধান কাটার ধুম, বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানে চিটা শান্তিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শান্তিগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা  উন্নত জাতি বিনির্মাণে সাংবাদিকরা অগ্রণী ভূমকিা পালন করেন: এমএ মান্নান এমপি জগন্নাথপুরে সার-বীজ বিতরন কালে সাবেক মন্ত্রী, দেশে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে দারুল ক্বিরাত হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদরাসা শাখা কেন্দ্রের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত  জগন্নাথপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৫

শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৫

 

হক ফারুক আহমেদ ::

‘জাগো ফুলে ফলে নব তৃণদলে/তাপস, লোচন মেলো হে।/জাগো মানবের আশায় ভাষায়,/নাচের চরণ ফেলো হে।/জাগো ধনে ধানে, জাগো গানে গানে,/জাগো সংগ্রামে, জাগো সন্ধানে,/আশ্বাসহারা উদাস পরানে/জাগাও উদার নৃত্য।’ রবিঠাকুর এভাবেই আবাহন করেছেন বাংলা নতুন বর্ষকে। বাঙালির জীবনে আজ এক নতুন দিন, নতুন বারতা। আজকের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হলো বাংলা ১৪২৫ সালের। এলো পহেলা বৈশাখ। বাংলার ঘরে ঘরে আজ উৎসব হবে। সব জনপদ, লোকালয়, সমতলে, পাহাড়ে বর্ণিল রঙে রাঙাবে বাংলা। প্রাণে প্রাণ মিলে মেতে উঠবে বৈশাখী উল্লাসে।

আজকের উৎসবে থাকবে নানা রং। গ্রাম থেকে শহর, নগর থেকে বন্দর সব জায়গায় আজ দোলা দেবে বৈশাখ। মুড়ি মুড়কি, মণ্ডা মিঠাইয়ের সঙ্গে নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় পুরো জাতি বরণ করবে নতুন বছরকে। বাংলা নববর্ষের উৎসবের কথা এক শিরোনামহীন কবিতায় জীবনের শেষশয্যায়ও লিখে গিয়েছিলেন কবি সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক। তিনি লিখেছেন ‘আর কিছু নয়/একটুখানি/ওতেই আছে সব/একটি বাঁশির সুরে/আমার বাংলার উৎসব/গ্রামের ঘরে ঢুলি যাচ্ছে/বের করছে ঢোল/ঢোলের বুকে বাড়ি পড়ছে/চক্ষু মেলে তোল/এই তো আমার দেশের বাড়ি/এই তো উৎসব।’

আজ বৈশাখে যেসব জায়গায় এখনও হালখাতার ঐতিহ্য রয়েছে সেখানে খোলা হবে বছরের নতুন খাতা। চলবে মিষ্টিমুখ। আর নববর্ষের নাগরিক ঐতিহ্যের দান পান্তা-ইলিশ খাওয়ার উৎসবে মাতবেন অনেকে। দিনটিতে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। এদিকে দুই আইনজীবীর মাধ্যমে দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

আমাদের পহেলা বৈশাখ পালনের হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে গেলেও এই উৎসব মূলত এসেছে গ্রামবাংলার মাটির কোল থেকে। সেখানে পহেলা বৈশাখে এখনও নানা আয়োজন হয়। তবে সংস্কৃতির আলো আরও ছড়িয়ে দিতে হলে বারবার ফিরে যেতে হবে সেই গ্রামেই। সংস্কৃতিসাধক ড. সন্জীদা খাতুন এ ব্যাপারে যুগান্তরকে বলেন, শুধু শহরে বসে সংস্কৃতিচর্চা করলে হবে না। গ্রামে গ্রামে ছুটতে হবে। সেই সঙ্গে সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বর্ষবরণ উদযাপনে আমাদের ভাবনায় ছিল মানুষের মনের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। মনের সঙ্গে সংস্কৃতির সংযোগ হলে মানুষ বদলে যায়।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও সরকারিভাবে পালন করা হবে পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। ইউনেস্কো কর্তৃক মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অবস্তুগত/অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে এবারও। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। সেই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর ও প্রতœস্থানসমূহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে (শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকিটে)।

বাঙালির বর্ষবরণ মানেই ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। এবার ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের ৫১তম আয়োজন। বরাবরের মতোই রমনা উদ্যানের অশ্বথমূলে হবে এবারের আয়োজন। শাশ্বত বাঙালি হবার প্রত্যয়ে এবার বর্ষবরণের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’। এবার পহেলা বৈশাখের ভোরে প্রভাতী আয়োজনের সূচনা হবে বাঁশিতে ভোরের রাগালাপের মধ্য দিয়ে। প্রায় দেড় শতাধিক শিল্পীর দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তিকালের প্রভাতী এ আয়োজন শুরু হবে সকাল সোয়া ৬টায়। শেষ হবে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ। এ আয়োজনে থাকবে ১৬টি একক গান, ১২টি সম্মেলক গান, দুটি আবৃত্তি এবং সবশেষে ছায়ানটের সভাপতি সন্্জীদা খাতুনের নতুন বছরের আবাহনী বক্তব্যে শেষ হবে অনুষ্ঠান।

প্রতিবারের মতো চারুকলার আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার লালন সাঁইজির গানের অমিয় বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্য হচ্ছে। যাতে আবহমান বাংলার লোকজ মোটিফের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। সকাল ৯টার পরপরই বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন লোকজ শিল্প কাঠামো নিয়ে এ শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (সাবেক রূপসী বাংলা) চত্বর ঘুরে চারুকলার সামনে এসে শেষ হবে। এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। এবারের শোভাযাত্রায় মোট বড় শিল্প কাঠামো থাকছে সাতটি। এগুলো হলো বক ও মাছ, মা ও পাখি, সূর্য, হাতি, জেলে, মহিষ, সাইকেলে চড়া ট্যাপা পুতুল।

এদিকে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক। বৈশাখের সাজে সাজানো হয়েছে পুরো শপিংমল। শপিংমলের বাইরে খোলা জায়গায় বৈশাখী মেলা ও ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেহেদী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে মেলা একটানা চলবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলায় থাকছে লোকজ সংস্কৃতির বানর নাচ, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্য গণনার মতো আয়োজন। এ ছাড়াও বৈশাখের দিন সকালে মেলায় রাজধানীবাসী ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। আর বিকালে থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান।

শিশু পার্কের প্রবেশদ্বারে নারকেলবিথী চত্বরে ৩৫ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার আয়োজনে থাকছে হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণের আয়োজন। এ ছাড়াও বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচারমেলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, র‌্যাডিসন ব্ল–, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সিসহ রেস্টুরেন্টগুলোর উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে থাকছে নানা আয়োজন। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগেও পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে।

বাংলা নববর্ষের আনন্দে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে বৈশাখী মেলা। সারা দেশের নানা জায়গায় এ বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। রাজধানীতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলা একাডেমি ও বিসিক ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও রমনার বটমূল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চারুকলা, টিএসসি, ছবির হাট, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ রাজধানীর সর্বত্রই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বৈশাখী উল্লাসে হারিয়ে যাবে সব শ্রেণীপেশার মানুষ। এদিকে রাজধানীতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তায় সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com